বঙ্গ-নিউজ: বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে। ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চটি শুক্রবার ভোররাতে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়, প্রাণ হারায় ৪০ জনের বেশি মানুষ। সেই বিভীষিকাময় রাতের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন লঞ্চটির সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেন, যাতে রীতিমতো বিস্ফোরক তথ্য মিলেছে।
জানা গেছে, লঞ্চটির ইঞ্জিন রুম থেকে রাত ৩টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে লঞ্চজুড়ে। দুর্ঘটনা শেষ রাতে হওয়ায় তখন বেশিরভাগ যাত্রী ঘুমে ছিলেন বলে জানিয়েছেন বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। এ নিয়ে লঞ্চটির মাস্টার খলিলুর রহমান ও ইঞ্জিন কক্ষের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সুপারভাইজার আনোয়ার হোসেন বলছেন, লঞ্চটির বাতিগুলো প্রথম নিভে যায়, তারপর লাগে আগুন; যারা অন্ধকার পথ হাতড়ে নদীতে ঝাঁপ দিতে পেরেছেন, তারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। ঘটনার সময় আমি নিচতলার পেছনের দিকে থাকা একটি টয়লেটে ছিলাম। হঠাৎ বাতি বন্ধ হয়ে গেলে দ্রুত বেড়িয়ে যাই।
পরে লঞ্চের ৩টি জেনারেটরের একটি চালু করতে গেলে ইঞ্জিন রুমে আগুন দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ড্রাইভার কালাম ও গ্রিজারম্যান সুমন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র খুঁজছিলেন। কিন্তু অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। কিছুক্ষণ পর দোতলায়ও আগুন জ্বলতে দেখেন সুমন। ইঞ্জিন রুম থেকে আগুন বের হয়নি, তাহলে দোতলায় গেলো কীভাবে?
পরে তৃতীয় তলায়ও আগুনের কথা শুনে অবাক হয়েছেন জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, এভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার কথা শুনে মাথা আর কাজ করছিল না। আগুনের কারণে সামনের দিকে যাওয়া যাচ্ছিল না। এর মধ্যেই যাত্রীদের কান্নাকাটি, চিৎকার-চেঁচামেচি। অন্ধকারে লঞ্চের সামনের দিকে দৌড়াচ্ছেন যাত্রীরা।
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টিকে ‘অ্যাবনরমাল’ মনে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এত দ্রুত, এভাবে কখনো আগুন লাগার কথা আমার জানা নেই। পুরো বিষয়টি ‘কনফিউজিং’। জেনারেটরের মাধ্যমে লঞ্চের বাতি ও ফ্যান চলে, ইঞ্জিন দিয়ে চলে লঞ্চ। তাই জেনারেটরের ত্রুটির কারণে আগুন লাগে কিনা বা আলো নিভে গেলেও ইঞ্জিন চালু ছিল কি-না, তা জানাতে পারেননি আনোয়ার হোসেন।
ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বলে একাধিক যাত্রীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, টয়লেটে থাকার সময় দুম করে একটা শব্দ শুনেছি। আগুন লাগার পরে আরেকটা শব্দ হয়। এসব শব্দ কোথা থেকে এবং কী কারণে হয়েছে, তা বলতে পারছি না।