সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বড়মোহা গ্রামে ক্রিকেট খেলা নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে এক যুবক খুনের ঘটনায় নিরপরাধ অনেক মানুষকে জড়িয়ে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থলে বা এলাকায় অবস্থান না করেও একাধিক ব্যক্তি আসামি হয়েছেন। নিরপরাধ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে প্রকৃত আসামিদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মামলার বিবরণে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭ জুন বৃহষ্পতিবার বিকেলে বড়মোহা গ্রামের ঈদগাহ মাঠে ক্রিকেট খেলা চলছিল। খেলা নিয়ে মামলার বাদী আনসার মিয়া জায়গিরদাররের ছেলে নাজিমুল ইসলামের সাথে একই গ্রামের এরশাদ খান ও আমিন খানের ঝগড়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামি জুবায়ের খান কর্তৃক ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে জবাবন্ধিতে জানানো হয় এই ঝগড়া নিয়ে নাজিমুল ইসলাম এরশাদ খানের মাথা ফাটিয়ে বাড়ি চলে যায়। পরে এর জের ধরে নিহতের পিতার এজাহার অনুযায়ী তার বাড়িতে গিয়ে তার ছেলের বুকে সুলফি দিয়ে আঘাত করেন মামলার ১ নম্বর আসামি শাহী আলম খান। এ ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। তবে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শাহী আলম খান ঘটনার সময় শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ছিলেন। প্রতিপক্ষের হামলায় নাজিমুল ইসলামের মৃত্যু হলেও তিনি হামলায় ছিলেননা। কিন্তু মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৫১ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই ঘটনায় জড়িত নন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ।
জানা গেছে খুনের পর প্রথমে শান্তিগঞ্জ থানায় মামলা হয়। ওই মামলায়ও প্রধান আসামি করা হয় শাহী আলম খানকে। পরবর্তীতে ডিবির কাছে মামলাটি হস্থান্তর করা হয়। কিন্তু থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের রেখেই চার্জশিট প্রদান করে ডিবি পুলিশ। এতে ঘটনাস্থলে না থেকেও অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি আসামি রয়ে গেছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। গত ১৯ নভেম্বর ডিবির ওসি ইকবাল বাহার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি জানান মামলার আসামি ও বাদী পরষ্পর আতœীয়। গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে মামলা ও বিরোধ চলছে। প্রতিবেদনে তিনি আরো জানান এই মামলার অন্যতম আসামি দিলোয়ার খান আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে সে নিজে নাজিমুল ইসলামকে খুন করেছে।
এলাকায় না থেকেও খুনের মামলার প্রধান আসামি হওয়ায় ওই পরিবারের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এলাকার মানুষজনও এ ঘটনায় তাকে জড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
শান্তিগঞ্জ বাজারের পল্লী চিকিৎসক বিপুল কান্তি দে বলেন, ঘটনার দিন শাহী আলম খান শান্তিগঞ্জে ছিলেন। আমরা তাকে দেখেছি। তিনি আমার দোকান থেকে অষুধ কিনেছেন। ঘটনার ৫-৬ মিনিট আগে আমার পাশের দোকান থেকে বাজার করে সিএনজি নিয়ে বাড়ি রওয়ানা দেন। তিনি কিভাবে শান্তিগঞ্জ থেকে মামলার আসামি হন এটা আমাদের প্রশ্ন। তিনি বলেন, আমরা খুনিদের বিচার চাই, নিরপরাধ মানুষ যাতে হয়রানি না হন সেটা দেখার জন্য আইনের প্রতি অনুরোধ রইল।
বসিয়াখাউরি গ্রামের সুহেল মিয়া বলেন, আমরা জানি প্রধান আসামি শাহী আলম খানসহ কয়েকজন এলাকায় ছিলেননা। তারপরও গ্রামের কোন্দলের জেরে তারা আসামি হয়েছেন। এ কারণে প্রকৃত খুনিরা বেরিয়ে যাবে। নিরপরাধ মানুষ শাস্তি পাবে। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি কাজি মোক্তাদীর বলেন, খুনের ঘটনায় ৫১ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছিল। পরে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরিত হয়। ডিবি অধিকতর তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
ডিবির ওসি মো. ইকবাল বাহার বলেন, আমরা মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি প্রধান আসামি জড়িত। তাছাড়া তিনি এর আগেও একাধিক মামলায় যুক্ত ছিলেন। এখন আদালত প্রমাণ করবেন তিনি ছিলেন কি না। আমাদের তদন্তে তাকে মাস্টারমাইন্ড প্রমাণিত হয়েছে।