বঙ্গনিউজঃ রেলে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে। এই প্রথম কমলাপুর ও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন দুটি ‘স্বয়ক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট’ উদ্বোধন করা হলো।
সোমবার দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ওয়াশ ফিটে প্রথম প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
তিনি বলেন, রেলে একের পর এক অত্যাধুনিক যাত্রীবাহি কোচ-ইঞ্জিন যুক্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭০০ নতুন কোচ সমন্বয়ে ট্রেন চলছে-আরও প্রায় ৪০০ কোচ আগামী বছরের মধ্যেই রেল বহরে যোগ হবে।
এ প্রযুক্তির ফলে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০টি যাত্রীবাহি কোচ পরিস্কার করা যাবে। এতদিন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মাত্র ১টি গাড়ি (১০ থেকে ১৪ কোচ) আড়াই থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগতো। এখন একটি গাড়ি মাত্র ৬ মিনিটের মধ্যেই পরিস্কার করা সম্ভব হবে-এ প্ল্যান্ট’র মাধ্যমে। ২৯ জন শ্রমিকের স্থলে মাত্র ১ জন শ্রমিক দ্বারাই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
রেলপথ মন্ত্রী বলেন, এ পদ্ধতিতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে রয়েছে- আমরা এতদিন পিছিয়ে ছিলাম। রেল বহরে নতুন নতন অত্যাধুনিক কোচ-ইঞ্জিন আসছে। এসব কোচ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ছাড়া পরিস্কার করা সম্ভব নয়। আমরা আজ (সোমবার) কমলাপুর ও রাজশাহীতে দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেছি। ধীরে ধীরে আরও এমন প্ল্যান্ট স্থাপন করবো। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও প্রায় ১৫০০ নতুন কোচ রেল বহরে যুক্ত হবে। এসব কোচ-ট্রেন অত্যাধুনিক এসব প্ল্যান্ট দিয়ে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরিস্কার করা যাবে।
রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী জানান, আমেরিকার প্রযুক্তিতে প্ল্যান্ট দুটি স্থাপন করা হয়েছে। এক একটি ট্রেন কমলাপুর বা রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছলে- ওয়াশিং প্ল্যান্টে পাঠানো হবে-মাত্র কয়েক মিনিটেই ওই সব ট্রেনগুলো পরিস্কার করা হবে।
এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে ট্রেনের বগিগুলোর উভয় পাশ, ছাদ, আন্ডার গিয়ার সুচারুভাবে পরিষ্কার করা হবে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যে পরিমান পানি খরচ হতো-তার চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কম পানি এ প্ল্যান্টে খরচ হবে। তাছাড়া ট্রেন পরিস্কারে ব্যবহৃত পানি রিফাইনিং করে-সেই পানি আবার ট্রেন পরিকারের কাজে লাগানো হবে।
এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ট্রেন ঠিকমতো পরিষ্কার করা সম্ভব হতো না। এতে ট্রেনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে মরিচা পড়তো। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্যই ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এই প্ল্যান্টে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ লিটার পানি সাশ্রয় করবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর যাত্রীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভ্রমণের জন্য এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক।
প্রকল্পের আওতায় ২০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ ও ৫০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি অটোমেটিক ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা হয়। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা।
কমলাপুর স্টেশনে প্ল্যান্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠানের আগে-রেলওয়ের উন্নয়ন বিষয়ক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রেলপথ সচিব সেলিম রেজার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, শফিকুল আজম খান, মো. সাইফুজ্জামান, এইচ এম ইব্রাহিম, নাছিমুল আলম চৌধুরী, রেলওয়ে মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার।